লেখক পরিচিতি
রণেশ মৈত্র
তিনি একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক।
তিনি একাধারে লেখক, কলামিস্ট ও রাজনীতিবিদ।
বাংলাদেশে অনেক চোখ-ঝলসানো বহুতল দালান-কোঠা নির্মাণ হয়েছে, যা অতীতে আমরা কল্পনাও করতে পারতাম না। আলো ঝলমল, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিপণী বিতান, অসংখ্য স্বর্ণ ব্যবসায়ী, গহনা নির্মাণ বা জুয়েলারির দোকান দিব্যি চোখকে ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। যমুনা-মেঘনার মত বড় বড় সেতু পেরিয়ে দ্রুত এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর মত বিশালকায় বহুমাত্রিক সেতুও। হচ্ছে রাস্তাঘাট নির্মাণ, অসংখ্য পত্রিকার প্রকাশ, সংখ্যা গণনার অতীব টেলিভিশন চ্যানেল, বিস্তর অনলাইন পত্রিকা, বিপুল সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি।
উদ্ধৃতি :জাগতে হলো বাঙালিকে। এই জাগরণের, যাকে আমরা সহজেই জাতীয় জাগরণ বলে অভিহিত করতে পারি- তার স্রষ্টা দুজন জাতীয় নেতা। এক, মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও দুই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।
এগুলো এমনভাবে ঘটছে, যা চোখকেই শুধু ধাঁধিয়ে দেয় না- তা যেন অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে। অন্তত পাকিস্তান আমলের পূর্ব বাংলায় (আজকের বাংলাদেশ) ঘুণাক্ষরেও ভাবা যেত না। সে কারণেই তো দশকের পর দশক ধরে আমাদেরকে আন্দোলন করতে হয়েছিল পূর্ব বাংলার পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীকারের জন্য। বাঙালি জাতির বিকাশের সামান্যতম সুযোগ পাকিস্তানে না থাকায়, ঐ আন্দোলনে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু আঘাত যতই তীব্র হোক, নিয়মতান্ত্রিক ঐ ধারাবাহিক গণ-আন্দোলন পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠিকে ভাবিত করে তুলতে সক্ষম হলেও তাদের চৈতন্যোদয় ঘটাতে কিংবা দাবিগুলি মেনে নিতে বাধ্য করতে পারে নি। বরং বিনিময়ে বাঙালির ভাগ্যে জুটেছিল শুধুই জেল-জুলুম-অত্যাচার আর নির্যাতন। তাদের ললাটে যেন লিখিত ছিল দারিদ্র, বেকারত্ব, ক্ষুধা, গৃহ ও সম্পদহীনতা।
অবশেষে জাগতে হলো বাঙালিকে। এই জাগরণের, যাকে আমরা সহজেই জাতীয় জাগরণ বলে অভিহিত করতে পারি- তার স্রষ্টা দুজন জাতীয় নেতা। এক, মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও দুই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।
বঙ্গবন্ধুর বিশেষ কৃতিত্ব তিনি তাঁর অসম সাহসিকতা ও বাঙালির প্রতি অসীম ভালবাসা দিয়ে গোটা বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন একই চেতনার সূত্রে গাঁথতে সক্ষম হয়ে ছিলেন। আর সেই চেতনা ও সেদিনকার সেই লৌহ দৃঢ় গণ-ঐক্যই সম্ভব করে তুলেছিল নয় মাস ব্যাপী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ঝাঁপিয়ে পড়তে। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটিকেও এক ধাক্কায় ভারতের পশ্চিমে ছুঁড়ে ফেলতে।
"সর্বাপেক্ষা উল্লেখ্যযোগ্য পরাজয় হলো পাকিস্তানের মৌলিক ভাবাদর্শ- দ্বিজাতিতত্ত্বের। কারণ বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করেছে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান নির্বিশেষে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে। তা স্পষ্টাক্ষরে লিখিত হলো বাহাত্তরের মূল সংবিধানে। এ লক্ষ্যে ঐ সংবিধানে নিষিদ্ধ করা হলো জামায়াতে ইসলামী নামক রাজনৈতিক দলসহ তাবৎ ধর্মাশ্রয়ী দলের।"
কিন্তু ইতিহাসের সত্য হলো তদানীন্তন পূর্ব বাংলার মুসলিম ভোটাররাই একযোগে পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দিয়ে পাকিস্তান নামক কিম্ভূতকিমাকার রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা করা বা পাকিস্তান দাবীর বাস্তবায়ন ঘটানোকে সম্ভব করে তুলেছিল। তারপরে মাত্র ২৩ বছর পেরোতে না পেরোতেই, ঐ রাষ্ট্রটিকে সেই একই বাঙালি মুসলিম বিদায় ধাক্কা দিতে গেলেন কেন?
বস্তুত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহসহ সেকালের মুসলিম লীগ নেতারা একটি কথাই শুধু মুসলমান সমাজের মননে মগজে ঢোকাতে পেরেছিলেন যে, পাকিস্তান হলে সেটা হবে মুসলমানদের রাষ্ট্র। আর তা না হলে এবং ভারতবর্ষ যদি অখণ্ড থাকে, তবে মুসলমানরা হিন্দুদের নেতৃত্বাধীনে চলে যাবে।
মুসলিম লীগের এই সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির সৃষ্টি হয়েছিল অতীতের হিন্দু, জমিদারদের দ্বারা মুসলিম নিপীড়ন এবং ঐ ইতিহাসকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে মুসলিম লীগের উপস্থাপন।
মুসলিম সম্প্রদায়ের মনে ঐ ভেদবুদ্ধি ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন নেপথ্য খেলোয়াড় ছিল ইংরেজ শাসকেরা। যারা কিছুতেই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে যৌক্তিক মনে করেনি। ভারতবর্ষকে ২০০ বছর ধরে শাসন ও শোষণ করে, ঐ বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ নেহায়েত বাধ্য হয়ে ভারতবাসীর স্বাধীনতার দাবি মেনে নিলেও হিন্দু-মুসলিম বিরোধ জিইয়ে রাখে। এতে আখেরে তাদের লাভ হবে মনে করে পাকিস্তান দাবিকে গোপনে উসকে দেয়। সেদিনের সেই সাম্প্রদায়িকতার দগদগে ঘা কী ভারতে, কী পাকিস্তানে, কী বাংলাদেশে- আজও শুকায়নি। বরং দিনে দিনে যেন সাম্প্রদায়িকতা যেন নতুন শক্তি নিয়ে নতুন রূপে আবির্ভূত হচ্ছে তিনটি দেশেই।।
কিন্তু সেই পাকিস্তানের দাবি যারা বাস্তবায়নে প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করলেন তাঁরা কেন নিজ হাতে ঐ সাধের পাকিস্তানকে বিদায় জানালেন? কেন ঐ কাজে হাজার হাজার মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান আদিবাসী অকাতরে বুকের রক্ত ঢেলে দিলেন? কেনই বা পাকিস্তানি মুসলিম-হিন্দু লক্ষ লক্ষ অবিবাহিত-বিবাহিত নারী ধর্ষিত হলেন? কেন কোটি কোটি মানুষ লুটপাট, অগ্নিসংযোগের শিকার হয়ে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ নির্বিবাদে হারালেন?
না, কোনও যাদুমন্ত্র বলে তেমনটি ঘটেনি। বরং অবিশ্বাস্য এ জাতীয় ত্যাগ তিতিক্ষার পশ্চাতে ছিল বাঙালি জাতির সম্মিলিত, ঐক্যবদ্ধ এবং চিরন্তন আকাঙ্ক্ষা স্বাধীনতা, যে স্বাধীনতার ঘোষণা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ৭ মার্চে প্রদত্ত তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে জাতির মর্মমূলে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
স্বাধীনতা বলতে বাঙালি জাতি বুঝেছিলো পাকিস্তানি অবাঙালিদেরসহ কোনও দেশি-বিদেশি শাসন, শোষণের হাত থেকে মুক্তি, দ্বিজাতিতত্ত্ব বা তদ্রুপ কোনো তত্ত্বের নামে সাম্প্রদায়িকতার হাত থেকে মুক্তি; অশিক্ষা, কুশিক্ষা, সামাজিক, ধর্মীয়, পশ্চাদপদতার হাত থেকে মুক্তি, নারীর প্রতি তাবৎ বৈষম্যের হাত থেকে ও সকল প্রকার নারী নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি, মানুষে মানুষে যে কোন ধরনের বৈষম্যের হাত থেকে মুক্তি, রাষ্ট্রীয় জীবনে সকল প্রকাশ অগণতান্ত্রিক আচরণের হাত থেকে মুক্তি।
তাই যখন এদেশের মানুষ দেখলো, পাকিস্তানে এগুলির কোনটাই প্রতিষ্ঠা করা যাবে না যখন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সকল পথ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বন্ধ করে দিল তখন বাধ্য হয়েই বাঙালি জাতি অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মাধ্যমে নয় মাসের যুদ্ধে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনলো। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলো ষোলই ডিসেম্বর উনিশ শ একাত্তরে লাখো প্রাণের বিনিময়ে।
শুধুই কি সশস্ত্র যুদ্ধের বিজয়? বাঙালি জাতির? পরাজয় হলো তবে কার?
পরাজয় শুধু পাকিস্তানের নয়। পাকিস্তানের তো শোচনীয় পরাজয় হলোই। পাশাপাশি পরাজয় বরণ করল আমেরিকা, চীন ও সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলির শাসকগোষ্ঠী।
এদেশগুলির পরাজয়ই শুধু নয়, সর্বাপেক্ষা উল্লেখ্যযোগ্য পরাজয় হলো পাকিস্তানের মৌলিক ভাবাদর্শ- দ্বিজাতিতত্ত্বের। কারণ বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করেছে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান নির্বিশেষে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে। তা স্পষ্টাক্ষরে লিখিত হলো বাহাত্তরের মূল সংবিধানে। এ লক্ষ্যে ঐ সংবিধানে নিষিদ্ধ করা হলো জামায়াতে ইসলামী নামক রাজনৈতিক দলসহ তাবৎ ধর্মাশ্রয়ী দলের।
পরাজিত হলো সামরিক-বেসামরিক স্বৈরতন্ত্রের এবং তার আদর্শেরও। পরাজিত করে ঐ আদর্শের বদলে লিখিত হলো গণতন্ত্র। যে গণতন্ত্রকে জনগণ এবং একমাত্র জনগণই হবে রাষ্ট্রের মালিক। থাকবে মৌলিক মানবাধিকারগুলির স্বীকৃতি। যেমন কথা বলার স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ ও আইনানুগভাবে সভা-সমিতি, মিছিল-সমাবেশ করার স্বাধীনতা, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা।
বৈষম্যমূলক সকল ভাবাদর্শের নিদারুণ পরাজয়ের সম্মুখীন হলো। নারী পুরুষের বৈষম্য থাকবে না দ্ব্যর্থহীনভাবে- তা লিখিত হলো বাহাত্তরের সংবিধানে। ধর্মবিশ্বাসের ভিন্নতায়, লিঙ্গের ভিন্নতা, বর্ণের ভিন্নতার কারণে কোন নাগরিকের মধ্যে কোন প্রকার বৈষম্যই আইনত গ্রাহ্য হবে না বলে সংবিধানে লিখিত হলো।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি শোষিতের পক্ষে’। বাহাত্তরের সংবিধানে তাই অন্যতম মৌলিক স্তম্ভ হিসেবে লিখিত হলো সমাজতন্ত্র। এভাবে পুঁজিবাদ হলো প্রত্যাখ্যাত, স্থান করে নিলো সমাজতন্ত্র। উল্লেখ্য, ষাট ও সত্তরের দশকের তরুণ সমাজও লাখো কণ্ঠে সমাজতন্ত্রের অনুকূলে শ্লোগান তুলে সারাদেশের রাজপথ মাঠ-ঘাট প্রকম্পিত করে তুলেছিল।
এহেন একের পর এক অর্জিত বিজয় যেন বিজয়ের বিশাল এক মালা গলায় স্থান করে নিয়েছিল বাঙালি জাতির। সেই বিচ্ছেদের নামই হলো বাংলাদেশ। কবিও তো তাই বলেছিলেন, ‘ বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি, বুঝে নিক দুর্বৃত্ত’।
কিন্তু না। চিত্রটি যতই গৌরবের হোক, যতই বিজয় অর্জিত হোক হাজারো সাহসী লড়াই এ বাংলাদেশ তা টিকিয়ে রাখতে পারেনি। এ সত্যও অতি অবশ্য স্বীকার্য্য। নিজেই হারিয়ে ফেলছে নিজেকে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ টিকিয়ে রাখতে পারলো না তার প্রথম সংসদে বাহাত্তর সালে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত সংবিধানটিকে। বঙ্গবন্ধুর ও জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছিল যে সংবিধানে পরিপূর্ণভাবে। খুনি বলে অভিহিত সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে ঐ পবিত্র সংবিধানটিকে ক্ষত-বিক্ষত করে সংযোজন করলেন ‘বিসমিল্লাহ’, যা অপর কোন মুসলিম সংবিধানেও আজতক স্থান পায়নি। একই অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী বাহাত্তর সংবিধানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামী ও ধর্মাশ্রয়ী দলগুলিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও তা বদলে সেগুলিকে বৈধ ঘোষণা করলেন, তুলে দিলেন সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা শীর্ষক মৌলনীতিও।
এরপর অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলো সামরিক স্বৈরশাসক হোসেন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি ঐ সংবিধানে বসালেন ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’। এভাবে বাহাত্তরের সংবিধানকে তার মর্মবাণীকে বিদায় দিয়ে পাকিস্তানের চাইতেও তাকে নিকৃষ্ট ধরনের সাম্প্রদায়িক ও অগণতান্ত্রিক চেহারা দেওয়া হলো।
আজ যখন দেখি ১৯৭৫ এর মর্মান্তিক হত্যালীলার ৪২ বছর পরও এবং মুক্তিযুদ্ধের বৃহত্তম দলটি একনাগাড়ে আট বছর যাবত দুই-তৃতীয়াংশেরও অধিক সাংসদ নিয়ে ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও ঐতিহ্যবাহী বাহাত্তরের সংবিধানটি অবিকল পুনর্স্থাপিত করতে পারছে না, বরং জিয়া-এরশাদের অবৈধ সংশোধনীকেও চলমান সংসদে সমর্থন করছে- তখন পশ্চাদ্ধাবনের গতির তীব্রতা অনুধাবনে সময় লাগে না।
সত্য বটে, কিছু যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও ফাঁসি হয়েছে, কিন্তু তাদের দল জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হয়নি। বহাল তবিয়তে ‘বৈধ’ দল হিসেবে বিরাজ করছে।
অর্থনীতিতেও কিছু দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। চোখ ধাঁধানো কিছু বহুতলবিশিষ্ট দালানকোঠা ও বিপণী-বিতান, রাস্তাঘাট ও সেতু নির্মিত হয়েছে। তেমনই আবার আর্থিক বৈষম্যও হয়েছে প্রকটতর। তাবৎ সম্পদ কুক্ষিগত হয়েছে গুটিকতক পুঁজিপতির হাতে। ৯৫ ভাগ মানুষ হয়েছে নিঃস্ব। বাজারে অগ্নিমূল্যের দাপট, জঙ্গিবাদের ও সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ব্যাপক বিস্তৃতি ধর্মীয়, জাতিগত সংখ্যালঘু ও তাদের উপাসনাসহ হামেশাই আক্রান্ত। বিচার নেই একটারও। ফলে বাড়-বাড়ন্ত তাদের দেশত্যাগ।
দুর্নীতি ও লুটপাট আজ সমাজকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে পাচার হয়ে যাচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরে। বছরের পর বছর ধরে এখন ঘটনা ব্যাপকভাবে চললেও তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কার্যত নীরব।
নারী অধিকার? হ্যাঁ দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেত্রী সবই নারী। কিন্তু নারী নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, হত্যা ও অপহরণ মাত্রাহীনভাবে বেড়েই চলেছে, যার বিস্তার নামকাওয়াস্তে চললেও তার শাস্তি তেমন একটা দৃশ্যমান নয়।
শিক্ষা? দেশে স্কুলের, কলেজের, বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ও শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা বিপুলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তা অতিশয় দৃশ্যমান। কিন্তু সেই শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতার বিষ মাখানো হয়েছে, বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সেখানে অনুপস্থিত। পরীক্ষায় নকল এবং প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনার আতঙ্কজনক বৃদ্ধি এবং শিক্ষারমানের ব্যাপক অবনতি ঘটেই চলেছে সকল কিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে।
ত্রিশ লাখ বাঙালির আত্মদান, বিপুল ত্যাগ, তিন বা চার লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি, কোটি কোটি মানুষের ব্যাপক সম্পদহানি যে বাংলাদেশের জন্য এটি সে বাংলাদেশের নয়।
বাংলাদেশ নিজেই নিজেকে হারিয়ে ফেলছে অত্যন্ত দ্রুতলয়ে।
Note: লেখাটি ঈষৎ মার্জিত ও সংগৃহীত